রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ব্যঙ্গবিদ্রুপ জঘন্য অপরাধ

মুফতি সফিউল্লাহ ওয়াহিদ:
ভুল মানুষেরই হয়। কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নই। ভুল হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়, কিন্তু এই স্বভাবজাত ভুলকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির মানুষ ট্রল করে। অনেকে এটাকে মজা-আনন্দ হিসেবে করে থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্রলবাজির পেছনে থাকে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন।

কারও ব্যাপারে উসকানিমূলক কথা বলা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারও মন্তব্যের সমালোচনামূলক লেখা পোস্ট করা অথবা কোনো কার্যকলাপের মাধ্যমে কাউকে হয়রানি বা সমালোচনা করে তার বিরোধিতা করাই হলো ট্রল। ট্রল বলতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ‘নিছক মজা করা’ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হলো ট্রলের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে কাউকে অপমান এবং ব্যঙ্গ করার মাধ্যমে তাকে হাসির পাত্রে পরিণত করা হয়। ট্রল করা শান্তিকামী সমাজের জন্য বিষাক্ত ব্যাধির মতো।

ট্রল যে উদ্দেশ্যেই করা হোক, এটি একটি মন্দ কাজ। বর্তমান সমাজে হরহামেশাই ট্রল করার প্রবণতা দেখা যায়। ফেসবুক ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে ট্রল করা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে।

একজনের একটি ছবি বা ভিডিও ভুলে প্রকাশ হয়ে গেলে এটিকে ভাইরাল করে ট্রল করা, কোনো বক্তার ওয়াজ কাটিং করে তাকে নিয়ে ট্রল করা, কারও আকার-আকৃতি নিয়ে বা কোনো মেয়ের স্বামী বয়সে বেশি বড় হলে বা কোনো ছেলে তার থেকে বয়সে বড় কাউকে বিয়ে করলে; সুন্দরী মেয়ের কালো বর হলে আবার কালো মেয়ের সুন্দর বর হলে; কেউ একটু মোটা হলে কিংবা কেউ একটু চিকন হলে ইত্যাদি বিষয়ে ট্রল যেন একশ্রেণির মানুষের রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

তারা একবারও ভেবে দেখে না, তখন ওই মানুষটির কী অবস্থা হয়। জীবন তার কাছে বিষময় হয়ে ওঠে। কখনো তো পরিস্থিতি আত্মহত্যা পর্যন্ত পৌঁছে যায়!

ট্রল বা ব্যঙ্গ করে মজা নেওয়া এবং অন্যকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা মুমিনের কাজ নয়। অপর ভাইকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ, তার দোষ চর্চা মুমিনের গুণ হতে পারে না।

কিছু নামধারী মুসলিম তো দ্বীনের বিষয় নিয়েও ট্রল করে। অথচ দ্বীনের কোনো বিষয় নিয়ে ট্রল ইমানহারার কারণ হতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! তোমরা কি আল্লাহ, আল্লাহর আয়াত ও তার রাসুলকে নিয়ে ঠাট্টা করছিলে? অজুহাত দেখিও না। তোমরা ইমান জাহির করার পর কুফরিতে লিপ্ত হয়েছ। আমি তোমাদের মধ্যে এক দলকে ক্ষমা করলেও, অন্য দলকে অবশ্যই শাস্তি দেব।’ সুরা আত-তাওবা : ৬৫-৬৬

কিছু মানুষকে দেখা যায় অপরের নাম নিয়ে ট্রল করে। নাম নিয়ে ট্রল করা মারাত্মক গোনাহ। নাম সবার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষকে তার নামেই ডাকা উচিত। কখনো কারও নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করা উচিত নয়।

ইসলামের বিধানে ট্রল করা কবিরা গোনাহ। ইসলাম অন্যকে নিয়ে ব্যঙ্গ করাকে গর্হিত কাজ বলে ঘোষণা করেছে। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! পুরুষগণ যেন অপর পুরুষদের উপহাস না করে। তারা (যাদের উপহাস করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরাও যেন অপর নারীদের উপহাস না করে। তারা (যে নারীদের উপহাস করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করো না এবং একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ইমানের পর গোনাহের নাম যুক্ত হওয়া বড় খারাপ কথা। যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই জালেম।’ সুরা হুজুরাত : ১১

নবী করিম (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের (দ্বীনি) ভাই। মুসলিম ব্যক্তি অপর মুসলিমের ওপর অবিচার করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না এবং অবজ্ঞা করবে না।’ মুসনাদে আহমাদ : ১৬৬৪৪

আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের সমাজে কারও অসুস্থতা এমনকি মৃত্যু নিয়েও ট্রল করার প্রবণতা দেখা যায়। মানুষ পাপী হলেও তার অসুস্থতা ও মৃত্যু নিয়ে ট্রল করা উচিত নয়। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশ দিয়ে জানাজার জন্য একটি লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে যান। এ সময় তাকে বলা হলো লাশটি একজন ইহুদির। তিনি বলেছিলেন, ‘সে কি মানুষ নয়।’ সহিহ বোখারি : ১৩১২

ট্রল কুৎসিত মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। আজকাল ট্রল এক ধরনের মানসিক রোগে পরিণত হয়েছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা আছে কিন্তু এর সীমা কতটুকু তা জানা দরকার। একজন মানুষ অন্যকে নিয়ে কখনোই হাসি-তামাশা করতে পারে না। কারও দোষ প্রকাশ হলে তা নিয়ে ট্রল না করে গোপন রাখাই হলো ইসলামের শিক্ষা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো মুসলিমের দোষ গোপন করে নেবে, আল্লাহ তার দোষত্রুটিকে দুনিয়া ও আখেরাতে গোপন করে রাখবেন।’ সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৫৪৪

সুতরাং একজন মুসলিমের জন্য জরুরি হলো অপরকে ট্রল না করে গোপনে তাকে সংশোধন এবং তার কল্যাণ কামনা করা। হজরত জারির বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-এর কাছে প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার জন্য বায়াত গ্রহণ করলাম। সহিহ মুসলিম : ৫৬

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION